টনি হোগল্যান্ড এর কবিতা অনুবাদ মঈনুস সুলতান
টনি হোগল্যান্ড
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কালের কবি টনি হোগল্যান্ড এর পুরো নাম এন্থনি হোগল্যান্ড। জন্ম ১৯৫৩ সালে নর্থ কেরোলাইনা অঙ্গরাজ্যে। তাঁর পিতা ছিলেন সেনাবাহিনীর ডাক্তার, সে সুবাদে শৈশবে কবি বেড়ে উঠেন হাওয়াই দ্বীপ, টেক্সাস, আলাবামা ও ইথিওপিয়ায়। তারুণ্যে ইউনিভারসিটি অব আরিজোনা থেকে ফাইন আর্টসে মাস্টার্স করেন। পরবর্তী জীবনে ইউনিভারসিটি অব হিউস্টনের ক্রিয়েটিভ রাইটিং প্রোগ্রামে অধ্যাপনা করেন। ২০০৩ সালে তাঁর কবিতার সংকলন ‘হোয়াট নারসিসিজম মিনস্ টু মি’ ন্যাশনাল বুক ক্রিটিক সার্কোল অ্যাওয়ার্ডের জন্য ফাইনালিস্ট নির্বাচিত হয়েছিল। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘সুইট রেইন (১৯৯২),’ ‘ডংকি গসপেল (১৯৯৮)’, ও ‘এপ্লিকেশন ফর রিলিজ ফ্রম দি ড্রিম (২০১৫)’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। শিক্ষাজীবনে কবি বেশ কয়েক বার কলেজ থেকে ড্রাপআউট হন, আবার ফিরেও যান অ্যাকাডেমিক শিক্ষাদীক্ষার পরিসরে। শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন একাধিক আপেল অর্চাডে। কিছুদিন কবি সমমনাদের সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করেছিলেন একটি কমিউনে। সে সময় গ্রহণ করেছিলেন বৌদ্ধ ধর্মমত। ২০১৮ সালে তাঁর মৃত্যু হয় নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের সান্তা ফে নগরীতে। এখানে উপস্থাপিত কবিতা দুটি চয়ন করা হয়েছে ‘সান’ ম্যাগাজিন থেকে, ও বায়ো-বিষয়ক তথ্যের সূত্র হচ্ছে ইন্টারন্যাট।
বার্ডহাউস
তোমার এখানে বিশ ফুটের মতো লম্বা
একটি মই পাওয়া যাবে কী?
আছে তো..। বেশ—তাহলে চল
ওটা টেনে বের করে নিয়ে আসি গ্যারেজ-ঘর থেকে।
তোমার বাড়ির পেছনের আঙিনা-মুখি কাঠের ডেক ঘেঁষে
দাঁড়িয়ে আছে যে দীঘল চিরসবুজের গাছ—
ওটার উপর দিকের ডালে পাখিদের জন্য তৈরি
কাঠের এ ছোট্টমোট্ট ঘরটি বসিয়ে দিতে চাই,
আমি লম্বা লম্বা পেরেক ঠুকে,
তারপর তারগুনা দিয়ে পচিয়ে শক্তপোক্ত করে বসিয়ে দেব।
আমি চাই বার্ডহাউসটি গাছের ডালে
লাগানো থাকুক দীর্ঘকাল।
আমি চাই- মাসের পর মাস, ঋতুর পর ঋতু
তুমি যেন বার্ডহাউসটি পর্যবেক্ষণ করতে পারো,
কীভাবে মা-পাখিরা কিছুক্ষণ পর পর উড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে
ড্রিল করে তৈরি ছোট্ট ফোকর দিয়ে,
যেখানে শাবকরা ঠোঁট ফাঁক করে দেখায় তীব্র গোলাপি ফুল।
আমি যদি কোন কারণে এখানে নাও থাকি
মনে হয়- তুমি মাঝেমধ্যে পাখিদের কৃত্রিম নীড় থেকে
উড়ে বেরুনো ও ফিরে আসার অস্থির তৎপরতার ভেতর
আমাকে প্রতিফলিত হতে দেখবে.. .. তাদের আসা যাওয়া
যে রকম আমি এক সময় তোমার এখানে আসতাম..
ফিরে যেতাম আবার আসতাম..,
কিন্তু চাইতাম না খুব ঘনিষ্ঠ হতে
অথবা এক জায়গায় একাধারে বেশীক্ষণ থেকে যেতে…
তারপরও বার্ডহাউসটি আমার সম্পর্কে তোমাকে
ভিন্নভাবে কিছু জানাবে;
বলবে যে- একদিন এখানে আমি এসেছিলাম
এটা এমন একটা জিনিস—যা আমি নিজহাতে তৈরি করেছি।
কোন এক বিশেষ অপরাহ্ণে- আমার গ্যারেজ-ঘরে
ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করে—
করাতের গুড়ো মেখে, জামাকাপড়ে রঙের দাগ ফেলে..
তারপর ঝামেলাটাকে আমি
বিশেষ একটি বৃক্ষের উঁচু শাখায় বসিয়ে দিয়েছিলাম—
জেনে শুনে যে- জীবনের সব কিছু কেবলই বদলে যায়
তারপরও কিছু একটা রেখে যায় পেছনে—
এবং তার ভেতরেও জীবন্ত কিছু একটা থেকে যায়।
তুমি হয়তো বলবে- স্মৃতি হচ্ছে
সত্যিকারের এক খণ্ড ভূসম্পত্তির মতো
যেন ফটক তোলা একটি বসতবাড়ি
তার অভ্যন্তরে কিছু রহস্য—
অনেকটা ছোট্টমোট্ট- এই কাঠে তৈরি
কমলালেবু রঙের ফুটকি আঁকা কুটিরের মতো—
ঝুলছে বিশ ফুট উঁচুতে
জিনিস একটি বটে কিছু কালের জন্য
শিকারি বুনো বিড়ালের নাগালের বাইরে কিছুটা সময়।
নতুন কৌশল
আরেকটি দেশ আক্রমণ করে,
কামান দেগে তাবৎ কিছু ধূলিসাৎ করে দেয়া চেয়ে—
আমরা না হয় গ্রহণ করি নতুন রণকৌশল
শুরু করি টাকাপয়সার বোমাবর্ষণ।
বিস্ফোরকের পরিবর্তে আমরা শেলগুলো ডলারে
পরিপূর্ণ করে তা ড্রপ করে দিতে পারি বিমান থেকে,
ওইগুলো মন্দির, শপিং-মল ও সরণীতে পড়ে ফেটে খুলে যাবে।
যে বাজেট আমাদের ব্যয় হবে- আরো অধিক গোলন্দাজী
হাতিয়ার প্রভৃতি তৈরি করতে—
তা কামানে ভরে গোলার মতো ছুড়তে পারি
দূতাবাস ও বিদ্যাপীঠগুলোর দিকে—
ছত্রীসেনার পরিবর্তে আমরা আকাশ থেকে ড্রপ করতে পারি
বুটজুতো, যা ছোট্টমোট্ট রেশমের প্যারাসুটে চড়ে নেমে যাবে-
আর জুতাগুলোর খোলে থাকবে চকোলেট ও টাকা।
প্রচারপত্রের পরিবর্তে আমরা ড্রপ করবো
রুবল, দিনার, ইউরো ও ইয়েন।
সেতুগুলো বিস্ফোরকে উড়িয়ে দেয়ার পরিবর্তে
আমরা বিমান থেকে রাত-নিশীথে ছুড়বো লাল গালিচা,
সূর্যের অরুণিম আভায় যখন ফুটবে ভোর
সেতুগুলোকে তখন দেখাবে তাজা রক্তের মতো লোহিত
তবে তা হবে ভারী, নরম ও আরামদায়ক।
বিভ্রান্ত ও সুখী দেশটি ভরে যাবে কোটিপতিতে:
এক হাত, এক চোখ ও এক পা খোয়ানো
বিকলাঙ্গ মানুষদের পরিবর্তে
জায়গাটিতে দেখা দেবে ভুলবো সারাইয়ের মেকানিক
এবং উদ্বোধন হতে থাকবে চিত্র-গ্যালারির।
রাজধানীর গুপ্ত পুলিশরা চলে যাবে গ্রামের দিকে
তারা পেশা হিসাবে বেছে নেবে বেহালা বাজানো,
তাদের মেয়েগুলো হবে প্রকৌশলী ও ফ্যাশন ডিজাইনার।
দাবিদাওয়া নিয়ে কেউ আর মাথা ঘামাবে না,
এক সময় যা ছিল ঘোরতর সমস্যা—
তা আর সমস্যা বিবেচিত হবে না।
রাষ্ট্রপতি বলবেন- এ যুদ্ধটি ছিল খুবই ব্যয়বহুল,
তবে প্রতিটি পয়সা কাজে লেগেছে। তার মুখ থেকে
মুছবে না হাসি- লক্ষ টাকার হাসির আড়ালে থাকবে
বিপুল ব্যয়ের উপকারিতা:
চমৎকার জুতো, দাঁত শাদা করার ঔষধ এবং নিরিবিলি নিশিরাত
এসব মানুষ সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করবে সর্বত্র।
মঈনুস সুলতান
জন্ম সিলেট জেলার ফুলবাড়ি গ্রামে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভারসিটি অব ম্যাসাচুসেটস থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ে ডক্টরেট করেন। বছর পাঁচেক কাজ করেন লাওসে-একটি উন্নয়ন সংস্থার কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হিসাবে।
খণ্ড-কালীন অধ্যাপক ছিলেন ইউনিভারসিটি অব ম্যাসাচুসেটস এবং স্কুল অব হিউম্যান সার্ভিসেস এর। কনসালটেন্ট হিসাবে জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক, মেসিডোনিয়া ও কিরগিজস্তান প্রভৃতি দেশে কাজ করেন অনেক বছর।
ইবোলা সংকটের সময় লেখক ডেমোক্রেসি এন্ড হিউম্যান রাইটস নামে একটি ফান্ডিং কর্মসূচির সমন্বয়কারী হিসাবে সিয়েরা লিওনের ফ্রিটাউনে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাভানা শহরে বাস করছেন। ব্যক্তিগত জীবনে প্রাচীন মুদ্রা, সূচিশিল্প, পাণ্ডুলিপি, ফসিল ও পুরানো মানচিত্র সংগ্রহের নেশা আছে।