সেই শান বাঁধানো পুকুর-ঘাট
বিরাট গম্বুজের মসজিদ,
মোটা দেয়ালের বড় বাড়ি!
শেষ শ্রাবণের কোন দিনে কাটা হয়েছিল নাড়ি
সেই আঁঠাল মাটি আজও আমার মুখে,
সেই স্মৃতি-গন্ধ্যা সন্ধ্যা আজও জেগে ওঠে বুকে
ধান-কাউনের উঠোন ভরা তালুকদার বাড়ি!
চড়ুই. শালিকের ঝগড়া লাগা চিলেকোঠা
সামনেই মাঠের মতো বিশাল ছাদ,
পাচিল ঘেরা ছাদে ছোট-বড় ছায়াদের ছুটোছুটি
আজ মনে পড়ার পুকুরে ডুব দেই, সাঁতার কাটি!
সেই তিল-তিশির রোদ-শুকানো আজও আমার দুপুর-ঘুমে
ঘুম আসে না, চোখের পানিতে পাতা হয়ে যায় ভারি
কৈ-শিং-শোল ভরা পুকুরের তালুকদার বাড়ি!
একটা শিকড় হয়েছে অনেক ঘর
দরজার কাচারি-ঘর অব্যবহারে হয়েছে পর,
হারিকেন-কুপির আলো মরা মরা
তবু বকধরা ঘুমে নামতা পড়া
অনিচ্ছায় অযু করা, নিয়মিত নামাজ পড়া
বসন্তের মতো বিদায় নিয়েছিল তালুকদারী!
তবু মাথা উঁচু করা তালুকদার বাড়ি!
সেই সিঁদুরে আম, কোমফা আম
শিউলি-শেফালী, চামেলী-এমেলী
ভুলে যাওয়া আরও কত ফুলের নাম
আমি নেই, হারিয়েছি, হারিয়ে গিয়ে আবার ফিরেছি
ফিরেছি, সেই পাকা-দেয়ালের গোরস্থানে, বেহেস্ত যেখানে
খালপাড়ের খেঁজুর গাছটায় রসে ভরে গেছে হাঁড়ি
কত জনের, কত মনের মনিকোঠায় তালুকদার বাড়ি!
সেই আরামে বাওয়া লিচু গাছ
গাছে দোল-দোল দোলুনী,
মক্তবে সুরা ভুলে গেলে হুজুরের পিটুনি
নানার আদর, খালা-মামাদের স্নেহ, মায়ের বকুনী,
বৌচি-কানামাছি, ফুলটোক্কা, এক্কা-দোক্কা
পেকে গেছে দাঁড়ি, তবু কি ভুলতে পারি
আমার এবং আমাদের প্রিয় তালুকদার বাড়ি!