শনিবার , ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংবাদ

বাংলাদেশকে বাদ রেখেই শুরু হচ্ছে কলকাতা বইমেলা

আগামী ২৮ জানুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে ৪৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। বর্তমানে চলছে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি। এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় কোন কোন দেশ অংশ নিচ্ছে, এরই মধ্যে তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই ঘোষণায় নেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের নাম।

যদিও ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন এই মেলার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন ঘিরে প্রতিবছর বইপ্রেমী মানুষের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত সরকারের অনাগ্রহে ৪৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশের প্রকাশকদের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কলকাতার সল্টলেকে আগামী ২৮ জানুয়ারি ৪৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার উদ্বোধন করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মেলা চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মেলায় এবারের ‘থিম কান্ট্রি’ জার্মানি। বইমেলার এবারের আয়োজনের বিষয় জানাতে গত শুক্রবার একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কলকাতার পার্ক হোটেলে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, পেরু, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়াসহ অনেক দেশ এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে।

সাংবাদিকরা বাংলাদেশের অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে ত্রিদিব বলেন, ‘বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে আমরা সরকারি নির্দেশনা ছাড়া কোনো কথা বলতে পারছি না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

গতকাল মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘বইমেলার দাওয়াত না পেয়ে হতাশ ঢাকা’। তাতে বলা হয়, কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের অংশ নেওয়া না নেওয়া এখন পুরোপুরি ভারতের উপরমহলের সিদ্ধান্ত। পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সূত্রে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনায় বইমেলায় বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।মেলায় অপ্রীতিকর কিছু ঘটতে পারে, এ আশঙ্কায় রাজ্য সরকারও সতর্ক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের মাধ্যমে বইমেলায় অংশ নিতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণপত্র পাঠায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম জানান, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এবার উপহাইকমিশনে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়নি। এ বিষয়ে জানতে মেলার আয়োজকদেরও ই-মেইল করা হয়েছে, তবে তারা জবাব দেয়নি।

যেহেতু প্রতিবছর কলকাতা বইমেলায় অংশ নিয়ে আসছিল বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থাগুলো, সেই বিবেচনায় গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথাও বলেছেন আফসানা বেগম। জবাবে ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানান, ঢাকায় একুশে বইমেলায় ভারতের প্রকাশনাকে রাখা হয় না, কিন্তু কলকাতায় বাংলাদেশের প্রকাশকরা অংশ নেন। কিন্তু এখন তারা মনে করছেন, কলকাতার মেলায় বাংলাদেশকে রাখা ঠিক হবে না।

আফসানা বেগম তাকে জানান, একুশে বইমেলা একটি জাতীয় আয়োজন। সেখানে বিদেশি কোনো প্রকাশনা সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক বইমেলা আয়োজনের চেষ্টা করছে সরকার, সেখানে ভারতকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এমনকি কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানালেও আমন্ত্রণ জানানো হবে।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আরো জানান, গত শুক্রবার কলকাতায় যে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল, তাতে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এবার মেলায় অংশ নিতে আবেদন করেনি।

আফসানা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্র, কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নয় যে মেলায় অংশ নিতে আবেদন করবে। সংবাদ সম্মেলনে এভাবে আবেদনের কথা তোলা সঠিক হয়নি। আর এবার জার্মানিকে মেলায় থিম কান্ট্রি করা হয়েছে, তারা কি আবেদন করেছে? নাকি তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে?’

ঢাকার কয়েকজন প্রকাশক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, ব্যক্তিগতভাবে তারাও মেলার আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু তাদের বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ না পেলে এ ক্ষেত্রে কিছু করার নেই।

অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কলকাতা বইমেলায় কয়েকবার বাংলাদেশকে থিম কান্ট্রি করা হয়েছে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত বই ও লেখকদের প্রতি ওখানকার পাঠকদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। এবারও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পক্ষ থেকে বৈঠক করে মেলায় অংশ নিতে আগ্রহী প্রকাশকদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে আগ্রহ না দেখানোতে বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।’

মনিরুল ইসলাম জানান, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পক্ষ থেকে আন্তরিক প্রচেষ্টার পরও ভারত সরকারের আগ্রহ দেখা যায়নি। গিল্ডের সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি।

বাংলাদেশকে এবার কলকাতা বইমেলায় রাখা হয়নি কেন জানতে চাইলে গতকাল পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা ছাড়া কিছু বলতে পারছি না। বাংলাদেশ আগ্রহ দেখালেও কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনার বাইরে আমরা কিছু করতে পারছি না।’


আরও